সোশ্যাল ওয়ালে ছবিটা ঘুরছে। আদুল গায়ে চিটে-ধরা ময়লা। পথের শিশুরা যেমন হয় ধুলো-ময়লায় মাখা, তেমনই।
জীর্ণ, কঙ্কালসার সেই চেহারার আপাদমস্তকে লেগে ষোলআনা অপুষ্টি। ততোধিক শীর্ণ তার পা দু’খানি। কোটরে ঢোকা পেট যেন ঠিকরে বার করে দিতে চাইছে বুকের খাঁচাকে। কবে যে পেটে শেষবার দানাপানি পড়েছিল, কে জানে!
অভুক্ত সেই শিশুমুখে জলের বোতল ধরেছেন এক মহিলা। তার ডান হাতে ধরা বিস্কুটের প্যাকেট। নিবিষ্ট মনে সেই পানি চুমুক দিচ্ছে পথের শিশু।
ছবির ফ্রেমে, অদূরে ধরা পড়েছে কৌতূহলী কয়েক জোড়া চোখ। যে চোখগুলি, এর আগে একটিবারের জন্যও ফিরেও দেখেনি বাচ্চাটিকে। মানবিকতার খাতিরে বাড়ায়নি একমুঠো খাবার। এক গেলাস পানি। পরিবারই যদি নির্দয় ভাবে, আবর্জনা মনে করে কাউকে আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলে, তার দিকে দেখবে কে!
তাই বিগত কয়েক মাস পথে পথে ঘুরে ‘মৃত্যুর ঠিকানা’ খুঁজছিল সে, নিজের মতো করে। হয়তো মৃত্যুই অনিবার্য ছিল। তা যে হয়নি, তার জন্য রয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার জন কয়েক উদ্যমী। খবর পেয়ে তারাই নাইজেরিয়ার রাস্তা থেকে উদ্ধার করেন শিশুটিকে। আদুল গায়ে কম্বোল জড়িয়ে দেন পরম স্নেহে। ভালো করে সাবান দিয়ে চান করিয়ে দেন। এরপর গাড়িতে করে নিয়ে যান ডাক্তারের কাছে।
নাইজেরিয়াও কি তা হলে এখনও ‘ডাইনি’র বিশ্বাসী থেকে বেরোতে পারেনি? পারেন বলেই, একটা একরত্তি শিশুকে কেউ এ ভাবে রাস্তায় ফেলে যেতে পারে। তার পর থেকে বিগত কয়েক মাসে একটা ঘর পায়নি সে। পায়নি কোনো আশ্রয়। সে হয়ে ওঠে ‘শয়তানের বাচ্চা’!
পরিবার পরিত্যক্ত এই শিশুর কথাই বলছিলেন ড্যানিশ সমাজসেবী অঞ্জা রিংগ্রিন লোভান। ‘যখন শুনলাম, বাচ্চাটার বয়স দুই কি তিন, আমরা তাকে উদ্ধারে দ্বিধা করিনি।’ তার কথায়, এটুকু বাচ্চা রাস্তায় একা একা, স্বজন-পরিবার ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে না।
শিশুটিকে উদ্ধারের সময় অবস্থা আশঙ্কাজনকই ছিল। নিভু নিভু করে জ্বলা প্রদীপের মতোই টিকে ছিল প্রাণের স্পন্দন। পরে, সেই উদ্ধারের ছবি সোশ্যাল সাইটে পোস্ট করেন অঞ্জা, যিনি নিজে আফ্রিকান চিলড্রেন্স এড এডুকেশনের ফাউন্ডার। আর্জি জানান ডোনেশনের জন্য। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে ফেসবুকে দু-দিনে উঠেছে ১ লক্ষ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।– সংবাদমাধ্যম
পাঠকের মতামত: